অবশেষে ১৭ আগস্ট বৈঠকে বসছে ভারত-নেপাল
তিন ভারতীয় ভূখণ্ডকে নেপালের নতুন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা-সহ কেপি শর্মা অলির সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপের কারণে দু-দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। অতিরিক্ত চিন প্রীতি দেখাতে গিয়ে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করায়, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নিজের গদিও টলমল।
এমতাবস্থায় ১৭ অগস্ট দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছে ভারত-নেপাল। প্রায় ন’মাস পর নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে দু-দেশের প্রতিনিধি আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি হতে চলেছেন। দু-দেশের বিদেশমন্ত্রণালয় পর্যায়ের এই বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন নেপালে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কাবাত্রা। নেপালের তরফে আলোচনায় যোগ দেবেন বিদেশসচিব শংকর দাস বৈরাগী।
নেপাল প্রশাসন সূত্রে খবর, নেপালের যে সমস্ত প্রকল্পে ভারত মূলধন বিনিয়োগ করেছে মূলত সেই সমস্ত বিষয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা হবে। পাশাপাশি দু-দেশের সম্পর্কে যে চির ধরেছে, তার সমাধান সূত্র খোঁজারও চেষ্টা হবে বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গেওয়ালি বলেন , ‘আমাদের কাছে আলোচনায় বসা ছাড়া আর কোনও পথ নেই। সীমান্ত নিয়ে মতভেদ হয়েছে বলে আমরা আমাদের সমস্ত চুক্তি অনুযায়ী কাজকে স্থগিত রাখতে পারি না।’ তাঁর কথায়, ‘আজ নয়তো কাল সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখন হচ্ছে না বলে তো আমরা হাতে হাত দিয়ে বসে থাকতে পারি না। আমাদের সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
সূত্রের খবর, দু-পক্ষের সম্মতিতেই ১৭ অগস্ট আলোচনার জন্য ঠিক হয়। নয়াদিল্লির তরফে ১৭ অগস্টের বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। আলোচনায় উন্নয়নমূলক প্রকল্প পর্যালোচনার উপর জোর দেওয়া হলেও সীমান্ত প্রসঙ্গ যে উঠবে, তা নেপালের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় ভূখণ্ড কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধাউরাকে অন্তর্ভুক্ত করে নয়া মানচিত্র তৈরি করে কেপি শর্মা অলির সরকার। নেপাল সংসদে তা পাসও হয়। সেই বিতর্কিত মানচিত্রটিই এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জ ও গুগলের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। যাতে গুগল সার্চে ওই তিন ভারতীয় ভূখণ্ড নেপালের অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ভারতীয় ভূখণ্ডকে নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত।
যার সূচনা চলতি বছরের ৮ মে। ওই দিন লিপুলেখ থেকে ধরচুলা পর্যন্ত রাস্তার উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এর পরেই ভারতের সঙ্গে নতুন করে সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ে নেপাল। কেপি শর্মা অলির সরকার লিপুলেখকে তার অংশ হিসাবে উল্লেখ করে, প্রতিবাদ জানায়। তার পরেই তড়িঘড়ি ১৮ মে, নেপাল একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে। এতে ভারতের তিনটি অঞ্চল লিপুলেখ, লিম্পিয়াধাউরা এবং কালাপানিকে নেপালের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিরোধ এখানেই থেমে থাকেনি। রামচন্দ্রকে নিয়েও টানাটানি শুরু করে দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। তিনি দাবি করেন, রামচন্দ্র ছিলেন নেপালি। এবং আসল অযোধ্যা নাকি নেপালে। ভারতে নয়। রাম নিয়ে অলির এই রাজধানীতি স্বাভাবিক ভাবেই ভালো চোখে দেখেনি ভারত।
বিরোধ আরও বাড়িয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, নেপালের বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অলির অভিযোগের আঙুল নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডর দিকে। প্রধানমন্ত্রীর কুরসি নিয়ে এই প্রচণ্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন অলি। চিনকে খুশি করতে গিয়ে অলি যে ভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়িয়েছেন নেপালের শাসক কমিউনিস্ট দলের নেতারা তা ভালো ভাবে নেননি। অলিকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ইস্তফা নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে বারবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছেন কেপি শর্মা। শাসকদলের সিনিয়র নেতাদের বড় অংশই তাঁকে পছন্দ করছেন না। এমত অবস্থায় একদম জোর করেই প্রধানমন্ত্রীর গদি আঁকড়ে রয়েছেন অলি।