বিনোদন

পেশায় ডাক্তার , অমর চরিত্র শার্লক হোমস সৃষ্টি করেছেন তার হাতেই ।

গোয়েন্দাগল্প যারা পড়েন, শার্লক হোমসের নামটি তাদের জানা। গোয়েন্দাকুল শিরোমণি শার্লক হোমসের স্রষ্টা হচ্ছেন  স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। সৃষ্ট শার্লক হোমস তাকে স্মরণীয় করে রাখবে আরো অনেক কাল।

পেশায় ডাক্তার হলেও লেখক হিসেবে তিনি অসামান্য খ্যাতি কুড়িয়ে ছিলেন, অমর চরিত্র শার্লক হোমস-ই তার বড় প্রমাণ। আর্থার কোনান ডয়েলের আরও একটি বিখ্যাত চরিত্র ‘প্রফেসর চ্যালেঞ্জার’। তিনি অনেক কিছুই লিখেছেন- সায়েন্স ফিকশন, নাটক, রোম্যান্স, কবিতা, ঐতিহাসিক উপন্যাস, স্মৃতিকথা, এমনকি নন-ফিকশনও।

বিশ্বখ্যাত প্রাইভেট গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে প্রথম দেখা যায়, ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’ গল্পে। লেখক কোনান ডয়েল নিজেই যাকে একজন ‘কনসালটেটিভ গোয়েন্দা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। 

২২১/বি, বেকার স্ট্রিট, লন্ডনে আড়াইতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন তিনি। মিসেস হাডসন ছিলেন তার বাড়িওয়ালি। তার বন্ধু ও সহযোগী ডা. ওয়াটসন জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটান শার্লক হোমসের সঙ্গে এই বাড়িতে। 

কোনান ডয়েল গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে প্রথম জনসমক্ষে আনেন ১৮৮৭ সালে। ছয় ফুট তিন ইঞ্চি হাইট, চৌকো মুখমণ্ডল, প্রায়ই কালো বা ছাইরঙা ওভারকোটে দৃশ্যমান, সংগীত ও গিটারে আসক্ত এই প্রাইভেট গোয়েন্দার পড়ালেখা প্রচুর। তিনি মক্কেলকে দেখেই বলে দিতে পারেন সে কোন পেশায় রয়েছেন। 

কোনান ডয়েলের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস আ স্টাডি ইন স্কারলেট, দ্য সাইন অব ফোর, দ্য হাউন্ড অব বাস্কারভিলস, দ্য ভ্যালি অব ফিয়ার। ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব শার্লক হোমস’, ‘দ্য মেমরিজ অব শার্লক হোমস’, ‘দ্য রিটার্ন অব শার্লক হোমস’, ‘হিজ লাস্ট বো’ এবং ‘দ্য কেসবুক অব শার্লক হোমস’।

বিষয়ের অভ্যাসগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হোমস আসল অপরাধীকে শনাক্ত করতেন। রহস্য কার না ভালো লাগে? মানুষ বুদ্ধিমান। তাই সে চায় জট খুলতে। আর্থার কোনান ডয়েল জট তৈরি এবং খোলাতে কতটা দক্ষ- শার্লক হোমস তার বড় উদাহরণ। 

আর্থার কোনান ডয়েল ছিলেন একে তিন। লেখক, ডাক্তার এবং উকিল। লিখলেন, তিনি ডাক্তারি করলেন, আবার কিনা ওকালতিও করলেন। রীতিমতো জাঁদরেল উকিলের মতো কেসও লড়লেন। 

অবশ্য তিনি রাজনৈতিক চরিত্রও ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে তিনি রীতিমতো রাজনীতির আঙিনায় নেমে পড়েছিলেন। কোনান ডয়েল ব্রিটেনে নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। তা-ও আবার একবার নয়, দুবার। আর হেরেছিলেনও দুবার-ই! তবে প্রতিবারই তিনি মোটামুটি ভালো ভোট-ই পেয়েছিলেন।

ভালো ক্রিকেটও খেলতেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক ভালো ভালো ম্যাচ খেলেছেন আর্থার কোনান ডয়েল। 

বলা হয়, শার্লক হোমস চরিত্রটির পেছনে একজন সত্যিকার মানুষ ছিল– নাম তার প্রফেসর জোসেফ বেল। তিনি কোনান ডয়েলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক শিক্ষক। জোসেফ বেলের চরিত্র শার্লক হোমসে এতটাই পরিষ্কার, একবার তো কোনান ডয়েলকে একজন জিজ্ঞেসই করে বসলেন, ‘শার্লক কি আমার বন্ধু জো?’

কোনান ডয়েল সবচেয়ে বেশি লিখেছেন শার্লক হোমস চরিত্রটি নিয়ে। শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা তার গল্পের সংখ্যা ৫৪টি, উপন্যাস ৪টি। শার্লক হোমসকে নিয়ে লিখতে লিখতে একসময় অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৮৯১ সালে মাকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমি হোমসকে খুন করানোর চিন্তা করছি… সে আমার মাথা থেকে অন্যান্য জিনিসগুলোকে বের করে দিচ্ছে।’

এই চিন্তা থেকেই ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম’ গল্পে তিনি শার্লক হোমসকে খুন করালেন। আর তারপর, তার মায়ের কথা মতোই, সব পাঠক শার্লককে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাতে শুরু করল। পাঠকের চাপে শেষমেশ ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য এম্পটি হাউজ’ গল্পে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে আনলেন শার্লককে। তিনি ব্রিটেনের রানির কাছ থেকে ‘নাইটহুড’ উপাধি পেয়েছিলেন। এজন্যই তিনি ‘স্যার’ আর্থার কোনান ডয়েল। অনেকের ধারণা তিনি নাইটহুড পেয়েছিলেন শার্লক হোমসের জন্য। আসলে তিনি নাইটহুড পেয়েছিলেন বোয়ার যুদ্ধের উপর লেখা তার নন-ফিকশন রচনাগুলোর জন্য।১৯৩০ সালের ৭ জুলাই তিনি ইংল্যান্ডের সাসেক্সে মৃত্যুবরণ করেন। আর জন্ম ১৮৫৯ সালের ২২ মে, স্কটল্যান্ডের এডিনবরায়।